লাউ এর উপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা সবাই জানে। লাউ আমাদের দেশের প্রাচীন একটি জনপ্রিয় সবজি। লাউ গাছের আগা, ডগা, ফল সবই পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। দেশের শহর কিংবা গ্রামের সকল মানুষের কাছে লাউ প্রিয় সবজি হয়ে উঠেছে।
আপনি জানতে চেয়েছেন লাউয়ের উপকারিতা সম্পর্কে। এই পোস্টটির ভিতরে আরও
জানতে পারবেন, লাউয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এবং লাউয়ের ভিটামিন সম্পর্কে। আসুন
পড়তে পড়তেই জেনে নেই লাউয়ের ভিতরে কি কি গুনাবলী আছে।
পেজ সূচিপত্রঃ লাউ এর উপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা কারোর অজানা নয়। লাউ এর প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান ও পানি থাকার পাশাপাশি এতে উপকারী ফাইবার ও আছে। লাউ মাছের তরকারি হিসেবে, নিরামিষ, ভাজি, বড়া কিংবা লাউদি হিসেবে খাওয়া যায়। এছাড়া লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। লাউ খেলে দূর হয় হজমের সমস্যা। এমনকি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য লাউ খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিডনিকে সুস্থ রাখে, এটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে।
লাউ কিডনি ও মূত্রাশয় পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। গরমে শরীর ঠান্ডা
রাখে, এটির শরীর ঠান্ডা ও জলবায়ুর প্রভাবে ডিহাইড্রেশন ঠেকাতে সাহায্য
করে । লাউ মুখের ব্রণ ও ত্বকের জন্য উপকারী। গ্রীষ্মকালে লাউ
খুব উপকারী সবজি।
লাউ এর উৎপত্তিস্থল
লাউ এর উপকারিতা জানার আগে জানতে হবে লাউয়ের জন্ম কোথায়। যদিও লাউ
এর উৎপত্তি রহস্য অজানা রয়ে গেছে। সেই হেতু বিশ্বের বিভিন্ন দেশ
যেমন- আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং
অস্ট্রেলিয়ায় প্রাচীন সভ্যতার গুলির নিদর্শনে লাউয়ের প্রমাণ পাওয়া
যায়। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতে লাউয়ের উৎপত্তিস্থল
আফ্রিকায়। লাউ এর উৎপত্তি যে দেশেই হোক না কেন, তা নিয়ে তর্কে-বিতর্কে
যাব না।
লাউ শুধু শীতকালের ফসল না গ্রীষ্মকালের ফসলও। বারী-২ জাতের লাউ সারা বছর আবাদ
করা যায়। বাংলাদেশের এখন সব জায়গায়ই লাউয়ের চাষ করা হয়। তাই আমরা জানতে
চাই কোন কোন জায়গায় কোন কোন জাতের লাউ চাষ করা হয়।
জমি নির্বাচন
লাউ চাষ করতে হলে আগে জমি নির্বাচন করতে হবে। লাউ চাষের জন্য উঁচু, মাঝারি
উঁচু এবং পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে, এরকম জমি নির্বাচন করতে
হবে। জমিটি এমন হতে হবে যে জমির কাছাকাছি কল কারখানা, ইটের ভাটা, মহাসড়ক ও
যেকোনো যান চলাচলের রাস্তা থেকে ৬০ মিটার দূরত্বে জমি হতে হবে, যা
পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত। এতে সমতল ভূমি চেয়ে পাহাড়ি ভূমিতে লাউ চাষ সবচাইতে
সুবিধা জনক।
মাটির ক্ষেত্রে অবশ্যই দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি হতে হবে। জমির চারপাশের
ড্রেনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তাতে সারি করে চারা রোপন করতে হবে। জমিতে
মাচা দেওয়ার জন্য অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে জায়গার ব্যবস্থা থাকতে
হবে।
লাউ চাষ পদ্ধতি
প্রথমে লাউয়ের বীজ পানিতে ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ দিন-রাত মিলে একদিন ভিজিয়ে
রাখতে হবে। মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশ্রিত প্রতিটি ছোট্ট পলিব্যাগের ভিতরে
একটি করে বীজ বপন করতে হবে বর্তমানে কিছু সংখ্যক লাউ চাষিরা কোকোপিট নামক
পটিং ব্যবহার করে যা চারার জন্য খুবই ভালো। হালকা সূর্য ও হালকা ছায়া এর ভিতর
রেখে পানি প্রয়োজন মত দিতে হবে। পোকামাকড়, রোগ -জীবাণু যাতে চারা কে
আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য হালকা সাদা ঘন জাল দিয়ে ঢেকে রাখতে
হবে।
আরোও পড়ুনঃ কচুর শাকের উপকারীতা
লাউয়ের চারা গাছে “রেড পামাকিন লিটল” নামে এক ধরনের পোকা আক্রমণ করে। এটি
দমনে ছাই ছিটিয়ে কিংবা বায়ো ক্লিন স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে ছত্রাক
নাশক ও কীটনাশক স্প্রে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। চারার বয়স
যখন ১৩ থেকে ১৪ দিন হবে কিংবা চার থেকে পাঁচ পাতা হলে জমিতে নিয়ে
রোপন করতে হবে। জমির প্রতিটি কলামে একটি করে চারা রোপন করতে হবে।
চারা গুলো বড় হলে তারপর আপনার উচ্চতা অনুযায়ী বাঁশ দিয়ে মাচা দিবেন এবং মাচার
খুঁটির সাথে লাউ গাছ বেধে দিবেন যাতে মাথায় উঠতে পড়ে না যায়। তারপরে দেখবেন
আপনার চারাগাছে যাতে কোন পোকামাকড় আক্রমণ না করে সে বিষয়ে সজাগ
থাকবেন। তারপর লাউ গাছে লাউ ধরলে সেগুলো বিক্রি করে আপনার সংসারে আয়
উন্নতি করতে পারবেন।
লাউয়ের প্রকারভেদ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত লাউ পাঁচ
প্রকার, যথা-বারি লাউ-১, বারি লাউ-২, বারি লাউ-৩, বারি
লাউ-৪ এবং বারি লাউ-৫। যথাক্রমে নিম্নে লাউয়ের জাতের বর্ণনা করা হলোঃ-
১। বারি লাউ-১ঃ এই জাতের লাউ গুলি প্রায়ই রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা এবং
ময়মনসিংহ এসব জায়গাতেই বেশি জন্মে। এটি প্রধানত শীতকালীন ফসল। এই জাতের লাউয়ের
আকৃতি হয় মাঝারি লম্বা এবং বোতল আকৃতির। এর খোসা পাতলা ও নরম তাই
খেতে সুস্বাদু এবং রোগ বালাই কম হয়।
আরোও পড়ুনঃ আর্টিকেল লেখার নিয়ম
২। বারি লাউ-২ঃ এই জাতের লাউ গুলি শীতকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত এই সময় ধরে ফল দিতে থাকে। এটি তাপ ও অতিবৃষ্টি সহ্য
করার ক্ষমতা রাখে। তাই গ্রীষ্মকালেও এই ফসলের চাষ করা হয়। বরিশাল, খুলনায় এই লাউয়ের চাষ
করা হয়। গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ফলন বেশি তাপমাত্রা সহনশীল ফসল। এটি মুক্ত
পরাগায়িত জাত।
৩। বারি লাউ-৩ঃ-এটি উচ্চ ফলনশীল শীতকালীন জাত। এই লাউয়ের গায়ের রং গাঢ় সবুজ এবং
গায়ে ফোটা ফোটা দাগ রয়েছে। এটি মুক্ত পরাগায়িত জাত। এই লাউয়ের চাষ সমগ্র
বাংলাদেশেই হয়ে থাকে।
৪। বারি লাউ-৪ঃ- এই জাতের লাউ উচ্চ ফলনশীল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অতি
বৃষ্টি সহিঞ্চু। ফলে সারা বছর উৎপাদন করা যায়। এই লাউয়ের গায়ের রং গাঢ়
সবুজ এবং গায়ে সাদা ফোটা দাগ রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশেই এই লাউ এর চাষ করা
হয়। এটি মুক্ত পরাগায়িত জাত।
৫। বারি লাউ-৫ঃ- এটি শীতকালীন জাত।এই লাউয়ের গায়ের রং গাঢ় সবুজ এবং গায়ে
সাদা ফোটা দাগ রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশেই এই লাউ এর চাষ করা হয়। এটি মুক্ত
পরাগায়িত জাত।
লাউয়ে পানির পরিমাণ
লাউ এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ পানি রয়েছে। ফলে নিয়মিত লাউ খেলে আমাদের শরীরকে
ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করবে। গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীরের পানি শুকিয়ে যায়।
গরমের কারণে বা ঘামের সময় আমাদের শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায়, লাউ সেটার
অনেকটাই পূরণ করে ফেলে। লাউ এ মূল উপাদান হ’ল পানি ( ৯৭%) তাই লাউ আমাদের পেটকে শীতল রাখে। এজন্য গরমের সময় লাউ দেহের জন্য উপকারী।
এছাড়া লাউয়ে থাকা প্রচুর পরিমাণে পানি পেশাবের জ্বালা সমস্যা দূর করে এবং পেশাবকে কষা থেকে রক্ষা করে। এইসব সমস্যা সমস্যার কারণে তাদের নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত। লাউ
খেলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
শরীরে লাউ এর উপকারিতা
লাউ কিডনিকে খুবই ভালো রাখে। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় নিয়মিত লাউ খেলে।
লাউয়ে থাকা পটাশিয়াম ও ফাইবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি হৃদরোগকে
সহায়তা করে। কিডনিকে সুস্থ রাখে, এটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে
। লাউ রস খেলে লিভারকে পরিষ্কার রাখে ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাউ সহায়তা করে। এছাড়াও জন্ডিস সমস্যা সমাধানে
ভূমিকা রাখে লাউ।
আরোও পড়ুনঃ আম সম্পর্কে
লাউ শরীরের হাঁড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধ
করতে সাহায্য করে লাউ। ত্বকের উপকারেও লাউয়ের কোন জুড়ি নেই। মুখের ব্রণও
কমে যায় লাউ খেলে। ত্বকের তৈলাক্ততা কমিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।
লাউয়ের মাঝে ভিটামিন
লাউ এর উপকারীতা এর মাঝে ভিটামিন অন্যতম। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,
ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি আছে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম,
ফসফরাস, ফোলেট, আয়রন এবং পটাশ আছে। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ
হার্টের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য লাউ খুবই উপকারী। লাউয়ের মাঝে অ্যামাইনো এসিডও বিদ্যমান আছে
।
এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফায়ারিন রয়েছে যা শরীরের প্রদাহ কমায়। তাই আমাদের
শরীরের ভিটামিনের জন্য লাউ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। তাই লাউকে অবহেলা না
করে, লাউয়ের গুরুত্বটা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।
ভালো ঘুমের জন্য লাউ
লাউ এর উপকারীতার মাঝে ভালো ঘুম অন্যতম। আমরা দিনে যতটুকু কাজ করি
ঠিক রাতে ততটুকু ঘুমাইলে আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। লাউ পাতা
ভর্তা বা রান্না করে খেলে মাথার মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য
করে। এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ
ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ও
অদ্রবণীয় ফাইবার এবং পানি আছে। দ্রবনীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য
করে।
কম ক্যালরির খাবার হিসেবে লাউ আদর্শ খাবার। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি
ফাইবার থাকে এবং খুবই কম ফ্যাট থাকে যা ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। মানসিক
প্রশান্তি এনে দেয় এবং রাতে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্যঃ লাউ এর উপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা বিস্তারিত শুনলাম। বাংলাদেশে এখন সারা বছর ধরেই লাউয়ের আবাদ করা
হয়। লাউ সঠিকভাবে চাষাবাদ করলে, উৎপাদন বেশি হলে আমরা বিদেশে রপ্তানি করেও
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।
তাওহীদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url