পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে এই পোষ্টটিতে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পড়ার সময় অযথাই ঘুম চলে আসা, এরকম ঘটনা সব ছাত্রের জীবনেই ঘটে। পড়ার সময় ঘুম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই জরুরী হয়ে উঠে পড়েছে।

পড়ার-সময়-ঘুম-তাড়ানোর-উপায়

আপনি জানতে চেয়েছেন যে পড়ালেখার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় কি? এই পোস্টটিতে আপনি জানতে পারবেন পড়ালেখার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে। আসুন আমরা জেনে নেই পড়ার সময় কিভাবে ঘুম তাড়ানো যায়। নিচে তা আলোচনা করা হলো।

পেজ সূচিপত্রঃ পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে আপনার পড়ার প্রতি মনোযোগ কিংবা ইচ্ছা আছে কিনা। তাহলেই আপনি পড়ার সময় ঘুম তাড়াতে পারবেন। নইলে অযথাই ঘুম টাকে নষ্ট করা উচিত না। কারণ ঘুম মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। অনেকেই পড়তে বসলেই অযথাই ঘুম চলে আসে এবং পড়তে মনের মধ্যে ইচ্ছে করেনা। পড়ালেখার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় গুলোর মধ্যে কার্যকরী কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলো অবলম্বন করতে পারলে আপনার পড়ার সময় বিরক্তিবোধ লাগবে না এবং ঘুমও আসতে চাইবে না।

আরোও পড়ুনঃ  দৈনন্দিন জীবনে দশটি সমস্যা

বিশেষ করে রাতে পড়ার সময় যখন ঘুম চলে আসে তখন পড়ার প্রতি বিরক্তিবোধ মনে হয়। কিছু কৌশল ও অভ্যাস অবলম্বন করলে আপনি পড়ার সময় আরও সতেজ এবং প্রফুল্ল থাকতে পারবেন। এই আর্টিকেলে পড়ালেখার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় গুলো সম্পর্কে আপনি বিশদভাবে জানতে পারবেন। যদি আপনার পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর রোগ থাকে তাহলে আপনিও হয়তো এই কনটেন্টটি পড়তে পড়তে এক সময় ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। ঘুম যাতে না আসে সে বিষয়ে আপনারাও হুঁশিয়ার থাকা প্রয়োজন। এই পোস্টটিতে পড়ালেখার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বিশদভাবে আলোচনা করা হলো-

পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় এর মধ্যে একটি কার্যকরী ভূমিকা হল পড়ার স্থানে পর্যাপ্ত পরিমান আলোর ব্যবস্থা রাখা। দিনের সূর্যের আলোর ভিতর যদি আপনার পড়া কমপ্লিট করতে পারেন এটা খুবই ভালো। দিনের আলোয় পড়াশোনা করতে পারলে আপনার চোখের জ্যোতি ভালো থাকবে। তবে যখন রাতে পড়তে যাবেন, তখন ঝলমলে উজ্জ্বল সাদা আলো ব্যবহার করতে হবে। কারণ সাদা আলো চোখে পড়লেই ঘুম কমানোর প্রবণতা অনেকাংশেই বেড়ে যায়।

পর্যাপ্ত-আলোর-ব্যবস্থা-রাখুন

খুব অল্প আলোতে লেখাপড়ার চেষ্টা করলে চোখের জ্যোতির উপর চাপ পড়ে যায় যা চোখের জন্য ভালো কোন কিছু হয় না। তাই আমাদের অল্প আলোতে পড়াশোনা না করাই ভালো। অল্প আলোতে অন্ধকার অন্ধকার ভাব আসে যার কারণে চোখে ক্লান্তি আসে এবং চোখের ঘুম আসতে শুরু করে। তাই এমন লাইট ব্যবহার করতে হবে যেখানে পড়ার স্থানে সম্পূর্ণভাবে আলোকিত করে রাখে। তাই আমাদের পড়ার সময় লাইটের উজ্জ্বল আলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধৌত করা

পড়তে পড়তে যদি আপনার চোখে ঘুম চলে আসে তাহলে ঠান্ডা পানি আপনি ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা দূর হতে থাকবে। আপনার চোখ যখন ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসে, তখন হালকা ঠান্ডা পানি মুখে দিলে আপনার চোখের স্নায়ু গুলোকে জাগিয়ে তোলে। আপনার মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। আপনার চোখের পাওয়ার জাগতে শুরু করে। তাই আপনার চোখে ঘুম তাড়ানোর জন্য পানির ভূমিকা অপরিসীম।

তাই পড়ার সময় পাশে ঠান্ডা পানি রাখতে কখনো ভুলবেন না। যাতে প্রয়োজন হলে আপনি এই পানি ব্যবহার করতে পারেন। চোখে যত পানি দিবেন ততই চোখ পরিষ্কার হতে থাকবে এবং চোখের জ্যোতি কখনো বাধা প্রাপ্ত হবে না।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করারও প্রয়োজন

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায় এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার ভূমিকা অপরিসীম। শরীর এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। পানির শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে যার ফলে আপনি অনেক বেশি এনার্জি অনুভব করতে পারেন। যদি আপনার শরীরে চাহিদা মত পর্যাপ্ত পানি না পায় তবে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। যা আপনার শরীরকে ক্লান্ত করে ফেলে এবং ঘুমের প্রবণতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পরিমাণ-মত-পানি-পান-করারও-প্রয়োজন

তাই পড়ার সময় আপনার টেবিলে এক বোতল পানি রাখবেন, যাতে ঘুম না আসে, যদি ঘুম আসে তাহলে একটু পর পর পানি পান করবেন। পানির বিকল্প হিসেবে ফলের রস কিংবা রসালো জাতীয় খাবার খেতে পারেন। যা আপনার শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

ঘুম তাড়ানোর জন্য কফি কিংবা চা বিশেষ জরুরী

লেখাপড়া করার সময় চা এবং কফি ঘুম তাড়ানোর অন্যতম প্রাচীন উপায়। কফি কিংবা চা মানুষের শরীরে মস্তিষ্কে ক্যাফেইনের প্রবাহ ঘটাতে সাহায্য করে। যা আপনার শরীরে স্নায়ুগুলিকে উজ্জীবিত করে এবং ঘুমের ভাব কাটিয়ে দেয়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে অতিরিক্ত চা কিংবা কফি গ্রহণ করলে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু হতে পারে এবং ঘুমের বিঘ্নিত হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে আপনার ঘুম কম হয়ে আসতে পারে।

তাই সীমিত পরিমানে কফি কিংবা চা পান করতে হবে যাতে আপনার শরীরের কোন ক্ষতি না হয়। বিশেষভাবে বলা যাচ্ছে যে সন্ধ্যার পরে খুব বেশি কফি না খাওয়াই ভালো। তবে মনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত কোন খাবার আপনার শরীরে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

সঠিকভাবে খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন

সঠিকভাবে খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে পড়ার সময় ঘুম ঘুম কখনো আসবে না। আপনি কি খাচ্ছেন, কতটুকু খাচ্ছেন তা আপনার ঘুমের উপর প্রভাব ফেলে। পড়ার সময় ঘুম তাড়াতে হলে আপনাকে অবশ্যই হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেমন- ফলমূল, বিস্কিট, স্যুপ, চানাচুর ও বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন যা দ্রুত এনার্জি প্রদান করতে সাহায্য করে। আরে খাবারগুলো হলো, যেমন-ভাত, রুটি, মাছ, মাংস ও  খিচুড়ি ইত্যাদি খাবার খেলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং ঘুম আসতে শুরু করে।

আরোও পড়ুনঃ লাউ এর উপকারিতা

তাই আমাদের উচিত হালকা এবং স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনার মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে এবং মনকে উৎফুল্ল করতে সহায়ক হয়। তাই অতিরিক্ত ভারি খাবার না খেয়ে পরিমাণমতো খাবার খেয়ে পড়াশুনায় মন দেওয়া উচিত।

সংগীতের মাধ্যমে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখুন

পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হালকাভাবে মৃদুস্বরে মিউজিক শুনতে পারেন। সংগীত আপনার মনোযোগ কে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে। তবে খেয়াল রাখবেন গান যেন উচ্চ স্বরে না বাজানো হয় এবং কারোর যেন ব্যাঘাত না ঘটে সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, কারণ উচ্চস্বরে গান শুনলে কানের শব্দ দূষণ হয় এতে আপনার কানে সমস্যা হতে পারে এবং গানের শব্দ দূষণে পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। হালকাভাবে গান শুনলে আপনার মস্তিষ্ক সচল থাকবে এবং ঘুম কাটাবে।

এমন কিছু গান নির্বাচন করতে হবে যা আপনার খুব প্রিয় এবং আপনার মনকে শান্ত করতে এবং পড়ার কাজে আরোও মনোযোগী হতে সাহায্য করে। গান যদি আপনি জোরে শোনেন তাহলে আপনার পড়ার বিঘ্ন ঘটতে পারে তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পড়ার ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি নিন

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর কৌশলে পড়ার ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটানা অনেকক্ষণ পড়াশোনা করলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে যায় এবং ঘুম পেতে শুরু করে তাই, ছোট ছোট বিরতি দিলে আপনার মস্তিষ্কে ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং ঘুম আস্তে আস্তে দূর হতে থাকে। ছোট ছোট বিরতি আপনার পড়ার আগ্রহকে জাগিয়ে তোলে, এতে আপনার মনোযোগ আরোও বাড়ে। আপনি ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পড়ার পর একটি ছোট বিরতি নিন। এই সময় আপনি একটু বিশ্রাম নিলেন কিংবা একটু হাঁটাহাঁটি করলেন কিংবা হালকা নাস্তা টাও সেরে ফেললেন।

বিরতি শেষ করে আবার আপনি পড়ার টেবিলে বসলেন আপনার মস্তিষ্কে আরো সতেজ ও প্রফুল্ল অনুভব করতে পারবেন। এবং মনোযোগ ধরে রাখতে আপনার পক্ষে সহজ হবে। তাই আপনি পড়ার ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি নিতে ভুলবেন না কখনো।

পড়ার সময় লেখা এবং শব্দ করে পড়া

পড়ার সময় যদি জোরে জোরে পড়তে না পারি তবে সেই পরা মুখস্থ হয় না এবং মনোযোগও আসে না। পড়ার সময় জোরে জোরে পড়লে আমাদের কান তার শ্রবন করে যে কারণে মুখস্ত হয় তাড়াতাড়ি। মনে মনে পড়ার চেয়ে জোরে জোরে পড়াই উত্তম। কারণ এটি শরীরকে বেশি ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করে। এতে পড়াশোনা করার সময় ঘুম না আসাতে সাহায্য করে। এছাড়া একটি নোট খাতা আপনার পাশে রাখুন যা পড়ছেন তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখে রাখতে পারবেন।

আরোও পড়ুনঃ কর্ম জীবনে সফল হওয়ার উপায়

আপনি পড়াগুলো মুখস্থ করতে এটি সেরা উপায় নয় এটি আপনার শরীরকে ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করে এবং আপনাকে জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আপনার শরীরে যদি ক্লান্তি না আসে তাহলে আপনার পড়ার মনোযোগ আসতে  সাহায্য করবে।

পড়ার বিষয়গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়ুন

আপনি যখন পড়া মুখস্থ করেন তখন কিন্তু বারবার একটি পড়াই পড়তে থাকেন। যে কারণে পড়াগুলো মুখস্ত করতে পারেন। আপনি যখন পড়াগুলো মুখস্থ করতেছেন এবং একই পড়া বারবার পড়তেছেন তখন আপনার মতে এক ঘেঁয়েমি ভাব চলে আসে। তখন আপনি মাঝে মাঝে একটি ছোট গল্প পড়বেন, কিংবা কবিতা পড়বেন। এটা পড়া নয়, এটা বিনোদন হিসেবে কাজ করে। পরবর্তীতে আপনার পড়ার প্রতি মনোযোগ আসবে।

তাই আপনি যদি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়তে থাকেন তাহলে ঘুম আপনার ধারের কাছে আসবে না। আর যদি আপনি পড়াশোনা বাদ রেখে নিশ্চুপ থাকেন কিছুক্ষণ পরে দেখবেন আপনার ঘুম চলে আসছে। তাই নিজেকে পড়াশুনায় সর্বদা ব্যস্ততা রাখলে ঘুমের খেয়াল কেটে যাবে।

শেষ কথাঃ পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর উপায়

উপরোক্ত কৌশল গুলো পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর জন্য যে উপায় গুলি বললাম সেটা খুবই কার্যকরী। এই নিয়মগুলো যদি নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারি তাহলে আমরা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ ফিরে পাবো এবং পড়াশোনায় অলসতা আসবে না এবং ঘুম চোখে কম আসবে। আশা করি এই পোস্টটি পরে আপনি উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

তাওহীদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url