হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনার জানা অত্যন্ত জরুরী। হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়ার সমস্যা প্রায় সকলেরই হয়ে থাকে। বেশি সময় ধরে না হওয়ার কারণে আমরা বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলি। হতেও পারে বড় কোন বিপদ।

হাত-পা-অবশ-হওয়ার-কারণ-ও-প্রতিকার
আপনি জানতে চেয়েছেন এই পোস্টটিতে হাত পা কোন কারনে অবশ হয় এবং এর থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে ব্যাপারে। এই পোস্টটিতে আমি আপনাকে জানাতে চাই কি কারনে হাত পা অবশ হয় এবং এর কি  প্রতিকার সে ব্যাপারে।

পোস্ট সূচীপত্রঃ হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

হাত-পা অবশ অনেক কারণে হতে পারে। যেসব কারণে হাত-পা অবশ হয় তা হলো- ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও স্ট্রোক সহ অন্যান্য অনেক রোগ থাকলে। এক জায়গায় অনেক ক্ষণ এক অবস্থায় বসে থাকলে কিংবা কোন কিছু অনেকক্ষণ সময় করে ধরে রাখলে হাত পা অবশ হতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ আম সম্পর্কে
নিম্নে হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকারগুলো তুলে ধরা হলোঃ
  • ভিটামিন বি-১২ লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে।ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, হাত পা অবশ হওয়া, ঝিঁন ঝিঁন করা ও দুর্বলতা দেখা দিয়ে থাকে।
  • আমাদের শরীরে রক্ত যদি সঠিক পথে চলাচল না করে তাহলে শিরা গুলির উপর প্রভাব ফেলে, যে কারণে আমাদের দেহের বিভিন্ন জায়গায় অক্সিজেন ঠিক মতো পৌঁছাতে পারেন তখন আমাদের শরীরের ওই অংশ ঝিনঝিন করে বা অবশ হয়ে যায়।
  • আবার কিছুক্ষণ পায়ের উপর পা তুলে রাখলে কিংবা হাতের উপর ভর দিয়ে ঘুমালে হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে।
  • বার বার হাত-পা অবশ হতে থাকলে, সাথে শরীরের অন্যান্য অংশও অবশ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
  • ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হাত-পা অবশ হতে পারে।
  • টিকা দেওয়ার পর জিবিএস এ আক্রান্ত হয়েছে, এমন রোগীরও হাত-পা অবশ হয়েছে।
  • আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ অ্যান্টিবডি গুলো ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। যেসব জীবাণু ঘটনের সঙ্গে আমাদের শরীরে স্নায়ুর গঠনের মিল রয়েছে যার কারণে এন্টিবডিগুলো শরীরের স্নায়ু দেরকে জীবাণু মনে করে আক্রমণ করে, যার ফলে স্নায়ুতে প্রদাহ শুরু করে এবং শরীরের মাংসপেশিকে সরবরাহ করেনা হলে দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • থাইরয়েড, ডায়াবেটিস,স্ট্রোক এবং অন্যান্য রোগের কারনেও হাত পা অবশ হতে পারে।
  • অ্যালকোহল এর পরিমান বেশি হলেও হাত পা অবশ হয়ে যেতে পারে।

হাত-পা অবশ হওয়ার লক্ষ্মণ

হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার জানার আগে লক্ষ্মণ সম্পর্কে জানতে হবে। এই রোগের লক্ষণ গুলোই যদি আপনি না জানেন এর প্রতিকার কিভাবে করবেন। নিম্নে লক্ষ্মণসমূহ জেনে নেওয়া যাক-
  • হাত-পা অবশ হওয়া রোগকে জিবিএস বলা হয়।
  • জিবিএস রোগের অজানা একটি লক্ষ্মণ হল পেশীর দুর্বলতা শুরু হওয়া। আগে হাত পা থেকে শুরু হয় তারপরে হাতে এখান থেকে শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
  • অনেক ক্ষেত্রে মুখ, ঘাড় ও বুকের পাজরের স্নায়ুকে আক্রান্ত করে ফেলে এবং রোগীর খাবার খেতে কষ্ট হয়ে যায়।
  • কখনো কখনো পা ও হাতে ঝিন ঝিন করতে থাকে।
  • অনেক সময় মাংসপেশিতে ব্যথা ও কোমরে ব্যথা দেখা দেয়।
  • শরীরের কিছু স্নায়ু শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেসব স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ উঠানামা করতে পারে।
  • জিবিএস রোগের লক্ষ্মণ অল্প করে দেখা দিলে তা ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকে এবং এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্মণ দেখা দেয়।
  • রোগীর প্রকারভেদে লক্ষণের মাত্রা আলাদা আলাদা ভাবে তীব্র হয় এবং অনেকে হাত পা একটুও নাড়াচাড়া করতে পারে না, পুরোপুরি অবশ হয়ে যায়।

হাত-পা অবশ হলে এর করণীয় কি

আমাদের শরীর সুস্থ থাকলেও হঠাৎ করে হাত কিংবা পা অবশ হয়ে যায়। একটানা শুয়ে কিংবা বসে থাকলে এরকমটি হতে পারে। এক হাতের উপর ভর বেশি পড়লে এমনটি হতে পারে। কি জন্য আমাদের শরীরের উপর এমনটি হবে তারও একটা ব্যাখ্যা রয়েছে। বিশ্লেষকরা এমনটি হওয়া থেকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মাল্টিপল স্কেলেরোসিসের কারণে অবশ হতে পারে। এরকমটি যদি বার বার একই ব্যক্তির সাথে ঘটতে থাকে তাহলে তাকে সতর্ক থাকতে হবে।চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছে, যেসব মানুষের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অনেক ক্ষেত্রে পেরিফেরাল স্নায়ু রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ লাউ এর উপকারিতা
পেরিফেরাল স্নায়ুর সমস্যায় পায়ের পাতা ঘন ঘন অবশ হতে থাকে। পরে ধীরে ধীরে ব্যক্তির শরীরের উপরের অংশেও দেখা দেয়া। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলে, নিউরোলজিয়ার কারণেও অবশ হতে পারে। স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হলে শরীরের তীব্র ব্যথা ও জ্বালা হতে পারে। শরীরের যেকোনো জায়গায়ও হতে পারে। স্ট্রোকের প্রথম লক্ষ্মণ হলো বাঁ হাত অবশ হয়ে যায় এবং হাতের তালু পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। মস্তিষ্কে যদি রক্ত সরবরাহ না থাকে এবং রক্তনালীর কোন কারণে বাধা প্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে স্ট্রোক হয়।
হাত-পা-অবশ-হলে-কি-করণীয়
এরকম হলে ফিজিওথেরাপি, নিভীরভাবে রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ করতে হবে।অনেক সময় পাঁজরের পেশি অবশ্যই হলে ও শ্বাসকষ্ট বেশি হলে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট লাগাতে হবে। রোগী খাবার গিলতে না পারলে খাবারের নল দিতে হবে।

হাতের অসাড়তা যে কারণে হয়

বিভিন্ন কারণে হাতের অসাড়তা হতে পারে। শারীরিক চাপ বা আঘাত থেকে শুরু করে আরো গুরুতর অন্তর্নিহিত চিকিৎসাগত ব্যবস্থা থেকে হাতের অসাড়তা হতে পারে। হাতের অসাড়তার কিছু সাধারন এবং কম সাধারণ নিম্নে দেওয়া হলো-

হাতের অসাড়তার সাধারণ কারণঃ
ঘুমানোর ভঙ্গিমা: হাতের অসাড়তা কখনোও কখনোও স্নায়ু বা রক্তনালীতে চাপের কারণে হতে পারে। যা খারাপ ভঙ্গির কারণে হয়ে থাকে।যেমন-ঝুঁকে পড়া কিংবা অস্বস্তিকর অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়া। এই ধরনের অসাড়তা অধিকাংশই অস্থায়ী। শরীরের অবস্থান সংশোধন করার পরে এটি ঠিক হয়ে যাবে।
চিমটিযুক্ত স্নায়ু: ঘাড় বা পিঠের উপরের অংশে একাট চিমটিযুক্ত বাহুতে অসরতা সৃষ্টি করতে পারে। স্নায়ুর উপর চাপ সঠিকভাবে সংকেত প্রেরনের ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে যার ফলে অসরতা অনুভূতি হয়।
সার্ভিকাল রেডিকুলোপ্যাথি: সার্ভিকাল রেডিকুলোপ্যাথি তখন ঘটে যখন সার্ভিকাল মেরুদন্ডের (ঘাড়) স্নায়ুমূল জ্বালাপোড়া কিংবা সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে বাহুতে অসাড়তা,ঝিনঝিন এবং দুর্বলতার সৃষ্টি হতে পারে। যা আঙ্গুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কার্পাল টানেল সিনড্রোম: কার্পাল টানেল সিনড্রোম কখন ঘটে যখন কব্জির মধ্য দিয়ে রক্ত সঞ্চালনের সময় মিডিয়ান স্নায়ুর উপড় চাপ পড়তে পারে। হাত এবং আঙ্গুলের ঝিনঝিন অনুভব করা অস্বস্তির কারণ হতে পারে, যা বাহু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কম সাধারণ কারণঃ
হৃদপিণ্ডে হঠাৎ আক্রমণ: হাতের অসাড়তা হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষ্মণ হয়ে যেতে পারে, তবে এর সাথে বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট ও মাথা ঘোরা থাকে। হার্ট অ্যাটাকের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাথার অংশ হিসেবে বাম হাত ভারী,ঝিনঝিন অথবা সম্পূর্ণ অসাড় বোধ করতে পারে। এরকম ঘটলে অবিলম্বে চিকিৎসা নিতে হবে।
স্ট্রোক: মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে স্ট্রোক হয়। যার ফলে আক্রান্ত স্থানের কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। যদি মস্তিষ্কের ডান দিকে স্ট্রোক হয়, তাহলে বাম পাশের অসাড়তা দেখা দিতে পারে, যার ভিতরে বাহু অন্তর্ভুক্ত। স্ট্রোকের অন্যান্য লক্ষণ গুলি হলো কথা বলতে অসুবিধা, মুখ ঝুলে পড়া এবং হঠাৎ দুর্বলতা।
মাল্টিপল স্কেলেরোসিস (এম এস): মাল্টিপল স্কেলেরোসিস হলো একটি স্নায়ুবিক রোগ। মাল্টিপল স্কেলেরোসিস কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং বাম বাহু সহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অসারতার অনুভূতির কারণ হতে পারে। মাল্টিপল স্কেলেরোসিস তখন ঘটে যখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্নায়ুর তন্ত্রের প্রতিরক্ষা মূলক আবরণ কে আক্রমণ করে মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করে।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, যার ফলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে বাহু এবং পায়ে অসাড়তা, ঝিনঝিন এবং ব্যাথা হতে পারে। রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। না থাকলে সময়ের সাথে সাথে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।

কেন পা অবশ লাগে

হঠাৎ করে অনেকেরই পা অবশ হয়ে যায়। বিভিন্ন উপায়ে পাওয়া অবশ হতে পারে। দেহের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিকের চেয়েও কমে গেলে পা অবশ হয়ে যায়। কাত হয়ে ঘুমানোর সময়ও পায়ের শিরার উপর চাপ লেগে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয় এর ফলে পা অবশ হয়।

পা অবশ হওয়ার প্রতিকার

অবশ হওয়ার প্রতিকার করার জন্য পায়ের উপর পা তুলে বসা যাবে না। কাত হয়ে না ঘুমিয়ে চিত হয়ে ঘুমানো ভালো। চিত হয়ে ঘুমালে পায়ে কম চাপ লাগবে এর ফলে পা অবশ হওয়া থেকে বিরত থাকবে। ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম করা, নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে পা অবশ হওয়া থেকে বিরত থাকে। পায়ে যদি কোন ইনফেকশনযুক্ত সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুত সমস্যা সমাধানে চিকিৎসা করার ফলে অবশ থেকে রেহাই পাবেন।    

হাত পা অবশ হওয়ার প্রতিকার

হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার এ আমরা জানতে পারবো। হাত-পা অবশ বার বার হলে আমরা এটাকে কিছু মনে করি না। সে ক্ষেত্রে এরকম ভাবা যাবে না, হঠাৎ করে একদিন গুরুতর আকার ধারন করতে পারে, সেজন্য আগে থেকে এর প্রতিকার অবশ্যই করতে হবে।
হাত-পা-অবশ-হলে-এর-প্রতিকার
  • শরীরের যে অংশে অবশ হয়ে যায় সেই অংশে কিছুক্ষণের জন্য মেসেজ করলে ধীরে ধীরে কমে যায়।
  • মেসেজ করার পরে যদি না কমে, তবে মনে করতে আপনার শরীরে সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
  • জিবিএস এর কোন সন্দেহ হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করিবেন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ, ফিজিওথেরাপি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করা খুবই জরুরী।
  • জিবিএস রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি এবং অকুপেশনাল থেরাপি জরুরী ভিত্তিতে দিতে হবে।

লেখকের মন্তব্যঃ হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এবং ঔষুধ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, হাত- পা অবশ লাগে কেন? অনেকের মাথায় এ প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, আজকের আর্টিকেলটি তাদের উদ্দেশ্যে লেখা। বেশি খারাপ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

তাওহীদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url