মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত ২০২৫ - মাইলস্টোন ট্রাজেডি

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই স্কুল ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।তখন চিৎকার করে শোনা যাচ্ছিল শিশুদের আর্তনাদ। বাঁচাও বাঁচাও বলে। তখন বেলা ১টা ১৮ মিনিটের সময় কুর্মিটোলার বিমান বাহিনী ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর যুদ্ধবিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়।
মাইলস্টোন-স্কুল-এন্ড-কলেজে-যুদ্ধ-বিমান-বিধ্বস্ত

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধবিমান কিভাবে বিধ্বস্ত হলো সে সম্পর্কে আপনি জানতে চেয়েছেন। আরো জানতে পারবেন এই কনটেন্টটিতে মাইলস্টোন ট্রাজেডিটি সম্পর্কে। আরো জানতে পারবেন যে, শিক্ষিকা কিভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আসুন এই পোস্টটি পুরোপুরি পড়ে মাইলস্টোন ট্রাজেডি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

পেজ সূচিপত্রঃ মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত

দিনটি ছিল ২১শে জুলাই ২০২৫ সাল-সময় ছিল বেলা ১টা ১৮মিনিট, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ক্লাস করছে, কেউ ছুটি শেষে বাসায় ফেরা প্রস্তুতি নিয়েছে, বাইরে অপেক্ষা করেছিল অভিভাবকগণ। প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার দুপুরেও ছিল রাজধানী উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এমন ব্যস্ততা। এমন সময় হঠাৎ বিকট শব্দে স্কুল প্রাঙ্গণে নেমে এলো এক বিভীষিকাময় মুহূর্ত। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের ছড়াছড়ি, ধোঁয়া আর ধোঁয়া, চিৎকারে এলোমেলো হয়ে গেলো পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ। সবার মুখে একটি শব্দ বাঁচাও বাঁচাও!

আরোও পড়ুনঃ ৯৯৯ এর সেবা সমূহ

পড়ে জানতে পারা যায়, বিমানবাহিনীর FT-7 BGI যুদ্ধবিমানটি স্কুল চত্বরের একটি দোতলা ভবনে আঘাত করে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয় চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমানটি। যুদ্ধবিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ভবনের উপর আছড়ে পরেছিল। এই যুদ্ধ বিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলা বিমানবাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর স্কুল ভবনের উপর এসে বিধ্বস্ত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খবর পায় বেলা ১টা ১৮ মিনিটে।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সাথে সাথেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা স্কুল ভবনে। দগ্ধ কোমলমতি শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগল প্রায় মা বাবা এবং স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে যায় স্কুলের চারপাশ। গতকাল রাত ১ টা পর্যন্ত খবর শুনে যা পেলাম এই মর্মান্তিক ঘটনায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে অন্তত ১৭১জন।

এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান দেয় যে, স্কুল ছুটির সময়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আবার কারো কারোও ক্লাস শেষে কোচিং চলছিল। যে ভবনের ওপর বিমানটি আছড়ে পড়ে সেই ভবনের পাশে ছিল শিশুদের খেলার দোলনা। কোন কোন শিশু তখন দোলনায় খেলতে ছিলো। এজন্য শিশুরাই বেশিরভাগ হতাহত হয়েছিল। বিমানটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় উদ্ধার কাজ। উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেছিল-

  • ফায়ার সার্ভিস
  • পুলিশ বাহিনী
  • সেনাবাহিনী ‍
  • র‌্যাব
  • আনসার বাহিনী
  • স্কাউট
  • অনেক স্বেচ্ছাসেবীরা

উদ্ধার করার পরে অনেকেই মারা যায় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলামও মৃত্যুবরণ করেছে। আহতদের উদ্ধারের পর এম্বুলেন্স করে নেওয়া হয় উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। রাজধানীর ৮টি হাসপাতালে হতাহতদের নেওয়ার খবর জানা যায়। রাজধানীর এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে যান হতাহতদের স্বজনেরা। স্বজনদের আর্তনাদ-আহাজারিতে ম্লান হয়ে যায় হাসপাতালগুলো।

চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন যে, আহতদের বেশিরভাগই দগ্ধ। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া যারা নিহত হয়েছেন, তাদের শরীর এমন ভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের চেহারা এখন চেনা অসম্ভব। নিহত হওয়ার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

কিভাবে বিধ্বস্ত হলো যুদ্ধবিমান

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়াবহ ঘটনার বিষয়ে যে ব্যাখা দিয়েছে আই এস পি আর। তারা বলেছেন যে, FT-7 BGI যুদ্ধবিমানটি প্রশিক্ষণের জন্য উড্ডয়ন করেছিল। উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বিমানটি। আই এস পি আর আরোও জানায়, দুর্ঘটনার মোকাবিলা করার জন্য এবং বড় ধরনের ক্ষয় ক্ষতি এড়ানোর জন্য যুদ্ধবিমানটির পাইলট মোঃ তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা ছেড়ে জনশূন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন। অপ্রত্যাশিত দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকা উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে যুদ্ধ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

আরোও পড়ুনঃ হাত-পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায় যে, বিমানটি প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাঠে আছড়ে পড়ে। পরে প্রায় 31 গজ গর্ত করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর দোতলা একটি ভবনের নিচ তলায় গিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। যুদ্ধবিমানটির সামনের অংশ নিচতলার একটি শ্রেণীকক্ষে ঢুকে পড়ে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এতে জানায় যে, বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমানটি বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ওই সময়ই বিমানে আগুন ধরা থেকে ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির ফটক দিয়ে যারা সিঁড়ি বেয়ে বের হচ্ছিলেন, তাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই হতাহত হন।

যুদ্ধবিমানটির পাইলট মোঃ তৌকির ইসলাম এর পরিবারের মাধ্যমে জানা যায় যে, তিনি প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালিয়েছে। মাইলস্টোন ট্রাজেডি ঘটনার কারণে বিমান বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আই এস পি আরের মাধ্যমে জানতে পারা যায়।

কেন এত হতাহত

প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানা গেল যে বিমানটি স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া এবং ঘটনাটি ছুটির সময় ঘটার কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, যে ভবনটিতে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সে ভবনটির নাম প্রজেক্ট-২। এই ভবনে দুই তলা মিলে মোট ১৬টি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। আর চারটি কক্ষ শিক্ষকদের। যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয় তৃতীয় শ্রেণী ও চতুর্থ শ্রেণীর কক্ষের সামনে। এই ভবনটিতে ছুটির পর ষষ্ঠ শ্রেণী, সপ্তম শ্রেণী ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কোচিং করতো।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময়ের একটি বর্ণনা দিয়েছেন যে, যুদ্ধ বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা ভবনে “ক্র‌্যাশ ল্যান্ডিং” করে। এই ভবনের প্রথম তলায় তৃতীয় শ্রেণী ও চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাশ ছিল। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় শ্রেণী ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস। তার সাথেই ছিল অধ্যক্ষের সভা কক্ষ। ওই ভবনের ঐ সময় একটা কোচিং এর ক্লাস চলছিল। তখন স্কুলও ছুটি হয়ে গিয়েছিল, ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়েছিল।

সাথে অভিভাবকেরাও ছিল। কিছু অভিভাবকগণ তাদের ছেলেমেয়েদের নিতে এখনও স্কুলে আসেনি। শিক্ষার্থীরা তখনো স্কুলে অবস্থান করেছিল তাদের বাবা মার অপেক্ষায়। ঠিক সেই মুহূর্তে এই ঘটনা। দুর্ঘটনার সময় এই ভবনে কতজন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেছিল তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ জানায় যে এই ভবনে ২৫ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে চ্যালেঞ্জ

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের কাছে মেট্রোরেলের সর্বশেষ স্টেশন। স্টেশনটিতে বেলা তিনটার দিকে লক্ষ্য করে দেখা যায় স্কুল প্রতিষ্ঠানটির দিকে যাওয়ার পথের সড়কে সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র উদ্ধারকারী যানবাহন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি চলাচল অব্যাহত। কিছুটা পথ হাটলে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরে মাইলস্টোন কলেজের সড়কে দেখা যায় রাস্তার দুই পাশের সড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

আরোও পড়ুনঃ উৎপাদনমুখী ব্যবসা ৫০০০ টাকায়

শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের স্বজন ও গণমাধ্যম কর্মীদের ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যেতে দেয়া হচ্ছে। উৎসুক জনতার ভিরের কারণে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়েছিল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক ও ঘটনাস্থলে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য শুকনো খাবার ও পানি আনতে অনেককেও দেখা যায়। এমন অবস্থায় আবার কেউ কেউ বিভিন্ন গ্রুপের রক্তদাতা খুজছিলেন।

এই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। রাত ৮:৩০ মিনিট নাগাদ  এই উদ্ধার অভিযান শেষ হয়। বিমানবাহিনী বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ অপসাড়ন করা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সেখানে অবস্থান করেছিল। পরে কাজের সমাপ্তি ঘটিয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার স্টেশনে ফিরে যায়।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে হতাহত

আমার এই কনটেন্টটি লেখা পর্যন্ত হতাহতের যে সংবাদ আইএসপি আর এর মাধ্যমে পেয়েছি তা এই পোষ্টটির মধ্যে জানিয়ে দিলাম। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩১ জন। তাদের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, মোট দশটি হাসপাতালে এ ঘটনায় আহত ১৬৫ জনকে নেওয়া হয়েছে। তা নিম্নে তালিকা দেওয়া হলো-

  • কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত সংখ্যা ৮ জন।
  • ঢাকা মেডিকেলে আহত সংখ্যা ৩ জন।
  • ঢাকা বার্ন ইন্সটিটিউটে আহত সংখ্যা ৪৬ জন।
  • ঢাকা সি এম এইচ এ হাসপাতালে আহত সংখ্যা ২৮ জন।
  • লুবনা হাসপাতালে আহত সংখ্যা ১৩ জন।
  • উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আহত সংখ্যা ৬০ জন।
  • উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত সংখ্যা ১ জন।
  • শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে আহত সংখ্যা ১ জন।
  • ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত সংখ্যা ২ জন।
  • কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত সংখ্যা ৩ জন।

এই কনটেন্টটি লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ যে খবর পেয়েছি তা উল্লেখ করা হলো। পরবর্তীতে আরো হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। সঠিক আপডেট পেলে তারপরে কনটেন্টটি সংশোধন করে দেব। এরকম মাইলস্টোন ট্রাজেডি আর কারো জীবনে যেন না হয় সে দোয়াই করি।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশের শোক বার্তা

  • জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নঃ মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে প্রাণহানির ঘটনায় জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শোক বার্তা জানিয়েছে। নিহতদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে এবং আহতদের আরোগ্য কামনা করে বিবৃতি দেয় ঢাকায় নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বাংলাদেশ মিশন এক টুইটারে পোষ্টে জানিয়েছে, “আমরা নিহত ও নিহতদের পরিবার এবং আহতদের পাশে আছি।
  • পাকিস্থানঃ পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বাংলাদেশের প্রাণহানির ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে।
  • জাপানঃ জাপান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নাওকি তাকাহাশি বলেন,“মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমানে এটি জাইকার সাথে যৌথভাবে প্রথম পিস ফ্লাওয়ার প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে আমরা পাশে আছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
  • ভারতঃ ভারতের  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বার্তায় লিখেছেন, ঢাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থীর প্রাণহানিতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।    

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় বাংলাদেশের শোক পালন

রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানিয়েছে, শোক পালনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে দেশের সর্বস্তরের সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে।

মাইলস্টোন-স্কুল-এন্ড-কলেজে-যুদ্ধ-বিমান-বিধ্বস্ত

পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশী মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। নিহত হয়েছে যেসব শিক্ষার্থীরা এবং আহত হয়েছেন যেসব শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে বীরত্ব গাথা কে এই মহীয়সী নারী

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যখন যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয় তখন গোটা স্কুলে ছড়িয়ে পড়ে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার ও আর্তনাদ করে। কারো পুরোপুরি গায়ে আগুন লেগেছে, কারোও কাপড়ে আগুন লেগেছে, কেউবা অজ্ঞান হয়েছে আবার কেউ ভয়-ভীতি পেয়ে ছোটাছুটি করছে। এমতাবস্থায় লেলিহান শিখার মাঝে অবতীর্ণ হয়েছে এক মহীয়সী মা। তার নাম মেহরিন চৌধুরী। মেহরিন চৌধুরীর স্বামীর নাম মনসুর হেলাল। মেহরিন চৌধুরী একজন মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষিকা। এই শিক্ষিকার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের বগুলাগাড়ী চৌধুরীপাড়া গ্রামে জন্ম।

তার পিতা মরহুম মুহিত চৌধুরী। মরহুম মুহিত চৌধুরী ছিলেন বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আপন চাচাতো ভাই। তিনি বনেদি পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি'র সুদিনে কখনো সামনে আসে নি। বনেদি পরিবারের সদস্য হয়েও তিনি সাদামাটা ভাবে জীবন যাপন করতেন। কোন রাজনীতির সুবিধা নেওয়ার মন-মানসিকতা ছিলনা বিধায়, তিনি এক সাধারণ স্কুল টিচার হিসেবে জীবন যাপন করতেন। মেহরিন চৌধুরী পরিবারের মধ্যে বড় সন্তান। বাবা মাকে হারানোর পর মেহরিন চৌধুরী তার পরিবারের অভিভাবক ছিলেন। মেহরিন চৌধুরী তার ঔরসে দুই সন্তান রেখে গেছেন।

নিজের শিক্ষা জীবনেও ছিলেন তিনি অসম্ভব মেধাবী। তিনি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছিলেন। পেশাগত জীবনে মেহেরিন চৌধুরী মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা মিডিয়াম শাখায় তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছিলেন কো অর্ডিনেটর। সম্প্রতি বগুলাগাড়ি গ্রামের স্কুল এন্ড কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের স্বপ্ন নিয়ে তিনি এড-হক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

স্কুল শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরী যে কাজে বীরত্ব দেখিয়েছেন

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা মিডিয়াম শাখার শিক্ষিকা মেহেরুন চৌধুরী শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন একজন মায়ের মত। নিজের জীবনের মৃত্যু পরোয়ানা না করে তিনি শিশুদের বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করেছিলেন। লড়াই করবেন না কেন? নিজের জীবনকে বিপদে রেখে অন্যের জীবনকে রক্ষা করার যে শিক্ষা তিনি তার পরিবার থেকেই পেয়েছেন। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অনেক উঠে আসছে হৃদয়বিদারক কাহিনী। বেদনা বিধুর সেসব গল্পের মাঝে শিক্ষিকা মেহেরিন এক সাহসিকতার প্রতীক। তিনি একজন নারী, একজন শিক্ষিকা ও একজন মা।

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত

তিনি নিজে অগ্নিকাণ্ডে ঝলসে গিয়েও শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, “দৌড়াও, ভয় পেয়ো না, আমি আছি”। বিমান দুর্ঘটনায় অগ্নিকান্ড যখন স্কুলের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন বাচ্চারা চিৎকার করেছিল। সবাই যখন দৌড়ে পালাতে চাইছিল, শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরী ছুটে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে। এতে তিনি নিজেও আহত হন। নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ওই অবস্থাতেই তিনি শ্রেণী কক্ষ থেকে একে একে ২০ শিক্ষার্থীকে বের করেছিলেন। কিন্তু একজন একজন করে বের করে আনতে তার নিজের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হচ্ছিল। একপর্যায়ে তার শরীরে ৮০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এক সেনা সদস্য বলেন, ম্যাডাম শ্রেণিকক্ষের ভিতরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের একে একে বের করে দিচ্ছেন, তারপর তিনি আর লেলিহান শিখা থেকে বের হতে পারে নাই। পরে এই সাহসী শিক্ষিকাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে তিনি তার স্বামীর সাথে একটু কথা বলেন কিন্তু তার এ কথাই শেষ কথা ছিল। তারপর তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চিরদিনের জন্য চলে যান। মেহরিন এর প্রতিদিনের কাজ ছিল স্কুল ছুটির পর শিশুদের হাত ধরে গেট পার করানো।  

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার দিন যদি তিনি চাইতেন তাহলে নিরাপদে থাকতে পারতেন। এদিন তিনি নিজে শিক্ষিকা পরিচয় ভুলে গিয়ে মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরী তার বীরত্তের কাহিনী শুনে দেশের মানুষের হৃদয়ে রেখাপাত করছে। আমরা তাকে কখনোও ভুলবো না।

লেখকের মন্তব্যঃ মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি বারবার মনে পড়ছে, “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।” যে স্কুল বিধ্বস্ত হয়েছে সে স্কুল হয়তো একদিন ভালো হবে, স্কুলের পাঠদান হয়তো আগের মতই থাকবে। সবই চলবে প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিক। কিন্তু থাকবে না স্কুলে যেসব শিক্ষার্থীরা যারা নিহত হয়েছেন আর থাকবে না সেই মহীয়সী শিক্ষিকা মা। নিহতদের জন্য মাগফেরাত কামনা করছি আর তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
4 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • helppeoplebd.com
    helppeoplebd.com 24 July 2025 at 15:03

    ভেরি গুড ভাইয়া অনেক ভালো হয়েছে আশা করি আরো ভালো কন্টেন লিখবেন দোয়া করি

    • alamin
      alamin 3 August 2025 at 17:43

      thanks

  • alamin
    alamin 3 August 2025 at 17:42

    g00d

  • alamin
    alamin 3 August 2025 at 17:42

    very good

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

তাওহীদ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url